ঢাকা,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

বদরখালী সমিতির সাধারণ সভায় সমবায় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

শনিবার ৪ মে অনুষ্ঠিত হয়েছে চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় ইউনিয়ন বদরখালীতে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তর সমবায়ী প্রতিষ্ঠান বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির ৬৩তম সাধারণ সভা। সাধারণ সভা উপলক্ষে সমিতির বর্তমান কমিটির সংশ্লিষ্টরা বিপুল অর্থ খরচে আয়োজন করেন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার। এতে অংশ নেয়ার কথা সমিতির দেড় হাজার সভ্য ছাড়াও পোষ্যরা। কিন্তু অনুষ্ঠিত সভায় অংশনেন মাত্র দেড় থেকে দুইশতাধিক সভ্য। উপস্থিত ছিলেন না সিনিয়র অতিথি এমনকি সরকারি আমলারা।

অভিযোগ উঠেছে, সাধারণ সভা সম্পাদনের ক্ষেত্রে সমবায় আইনে অনেকগুলো বিধিমালা থাকলেও সমিতির সংশ্লিষ্টরা তা উপেক্ষা করে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে একতরফাভাবে সভাটি সম্পন্ন করেছে। এতে সাধারণ সভাটির নীতিগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমিতির সভ্য-পোষ্যরা। তাঁরা এ ধরণের সাধারণ সভা অবিলম্বে বাতিল পুর্বক পুনরায় সভা আহবানের দাবি জানিয়েছেন।

সমিতির সভ্যরা দাবি করেন, সাধারণ সভার ক্ষেত্রে সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ এর ১৬ (২) বিধি মোতাবেক উপস্থিত সদস্যগন ওইদিনের সাধারণ সভার সভাপতি নির্বাচিত করেন। এইক্ষেত্রে আইনে বলা আছে সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুইটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। একটি হচ্ছে উপস্থিত সদস্যরা হাততোলা ভোটে সভাপতি নির্বাচিত করবেন। অপরটি হচ্ছে ব্যালটের মাধ্যমে সভাপতি করবেন। প্রয়োজনের সিদ্বান্ত গ্রহনের আগে বা পরে সমিতির উপস্থিত ১০ শতাংশ সদস্য সভাপতি পদে ভোট দাবি করলে ভোট গ্রহন করতে হবে। কিন্তু শনিবার অনুষ্ঠিত সমিতির ৬৩তম সাধারণ সভার ক্ষেত্রে সমিতির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সমবায় আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একতরফাভাবে সভাপতি নির্বাচন পরবর্তী সভাটি সম্পন্ন করেছে।

সমিতির নবীণ প্রবীণ একাধিক সভ্য জানান, সাধারণ সভা শুরুর আগে সমিতির বর্তমান সম্পাদক জয়নাল আবেদিন খাঁন মাইকে ঘোষনা দেন এখন সাধারণ সভার সভাপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওইসময় তিনি সভাপতি পদে প্রথমে সমিতির বর্তমান সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদারের নাম ও পরে উপস্থিত সভ্যদের আপত্তির মুখে সমিতির অন্যতম সভ্য ওয়াইজ উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করেন। এসময় তিনি সমবায় আইন মতে হাততোলা ভোটে সভাপতি পদে কাকে চান জানতে চাইলে হাজি নুরুল আলমের পক্ষে দেড় থেকে দুই শতাধিক সভ্য হাত তুলেন। পরবর্তীতে তিনি ওয়াইজ উদ্দিনকে সাধারণ সভার সভাপতি পদে কারা দেখতে চান জানতে চাইলে ওইসময় উপস্থিত পাঁচশ থেকে ৬শতাধিক সভ্য তাঁরপক্ষে হাততোলা ভোট দেন।

সমিতির নবীণ প্রবীণ একাধিক সভ্য অভিযোগ তুলেছেন, সাধারণ সভার সভাপতি ওয়াইজ উদ্দিন অধিক পরিমাণ উপস্থিত সভ্যদের ভোটে নির্বাচিত হলেও ওইসময় সমিতির সম্পাদক খাঁন জয়নাল অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে বলেন উত্তর পাশে একটু হাত বেশি উঠেছে, দক্ষিনে কম উঠেছে, আপনারা আবার একটু দুইভাগ হয়ে যান। এ ধরণের কথা বলে তিনি ওয়াইজ উদ্দিনের বদলে কৌশলে হাততোলা কমভোট পাওয়া হাজি নুরুল আলমকে সাধারণ সভার সভাপতি ঘোষনা দেন। এসময় উপস্থিত সভ্যরা এ ধরণের অনিয়মের তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ জানিয়ে ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনের দাবি জানান। কিন্তু সমিতির সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টরা তা অমান্য করে হাজি নুরুল আলমের সভাপতিত্বে সাধারণ সভাটি একতরফাভাবে সম্পন্ন করেছে।

সমিতির সভ্যরা অভিযোগ করেছেন, সমিতির বর্তমান হাজি নুরুল আলম সিকদার দুই মেয়াদে সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হবার পর নানা ধরণের অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। নিজের অনুকুলে সমিতির বড় আকারের তিনটি মৎস্যঘের গত ছয়বছর ধরে তিনি তুলনামুলক কম টাকায় ইজারা নিয়ে দখলে রেখেছেন। এমনকি নিজের নামে সমিতি থেকে একাধিক দোকানঘর বরাদ্দ নিয়েছেন।

এসব কারনে তিনি নৈতিকভাবে সভ্যদের কাছে আস্থা হারিয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে সমিতির ৬৩তম সাধারণ সভায় সমবায় আইনের আলোকে হাজি নুরুল আলমকে সভাপতি না করে সমিতির অন্য যে কোন একজন পরিচ্ছন্ন সমবায়ীকে সভাপতি নির্বাচিত করার দাবি জানান। কিন্তু সমিতির সদ্য মনোনীত সম্পাদক বিশাল জনগোষ্ঠির দাবিকে উপেক্ষা করে নানা কারনে আলোচিত হাজি নুরুল আলমকে সভার সভাপতি নির্বাচিত করেন। সেই কারণে সভা শুরুর আগে অনুষ্ঠানস্থল থেকে সভ্যরা চলে যান।

এ অবস্থার প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত সভায় অংশনেন মাত্র দেড় থেকে দুইশতাধিক সভ্য। অনুষ্ঠানমঞ্চে বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল বশর, সমিতির সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদার, সম্পাদক জয়নাল আবেদিন খাঁন, সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সমিতির সহ-সভাপতি (বাহাদুর) ও কয়েকজন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। তবে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন না স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা। ফলে অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে সাধারণ সভাটি সম্পন্ন করেছে পরিচালনা কমিটি।##

পাঠকের মতামত: